শনিবার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৪   পৌষ ৭ ১৪৩১

২০১৮-১৯ অর্থবছরে নাসিকের বাজেট ৭১৫ কোটি টাকা

প্রকাশিত: ১৭ জুলাই ২০১৮  

শামীমা রীতা (যুগের চিন্তা ২৪) : নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট বুধবার (১৮ জুলাই) ঘোষণা করা হবে। সিটি করপোরেশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বাজেটের পরিমাণ ৭১৫ কোটি ৫১ লাখ ২১ হাজার ৩৭৭ টাকা।


নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নগর ভবন প্রাঙ্গণে বুধবার সাড়ে ১০টায় ওই বাজেট ঘোষণা করবেন মেয়র সেলিনা হায়াত আইভী । পরে তিনি ‘জনতার মুখোমুখি সিটি করপোরেশন’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রশ্নের জবাব দেবেন। ২০১৬ সালের ২২ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে জয়ী হয়ে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেয়ার পর এটা মেয়রের দ্বিতীয় বাজেট ঘোষণা। ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে সিটি করপোরেশনের বাজেটের পরিমাণ ছিলো ৬৬৩ কোটি ৬৭ লাখ ৪৩ হাজার ৬২৫ টাকা।


নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বাজেটে রাজস্ব আয় ১০৫ কোটি ৪ লাখ ৯৬ হাজার ৮৭১ টাকা এবং উন্নয়ন আয় ৬১০ কোটি ৪৬ লাখ ২৪ হাজার ৫০৬ টাকা ধরা হবে। আর ৭৯ কোটি ৩ লাখ ২০ হাজার ৩৫৪ টাকা রাজস্ব ব্যয় এবং ৬২৭ কোটি ৪৯ লাখ ৪৪ হাজার ৯৮৮ টাকা উন্নয়ন ব্যয় ধরা হবে। উদ্বৃত্ত রাখা হয়েছে ৮ কোটি ৯৮ লাখ ৫৬ হাজার ৩৮৯ টাকা।


নাসিকের সপ্তম বাজেটে উন্নয়ন খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। বাজেটে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ডে রাস্তাঘাট, ড্রেন নির্মাণসহ অবকাঠামোগত উন্নয়নের ওপর জোর  দেওয়া হয়েছে।


এছাড়া এবারের বাজেটে রাস্তা, ড্রেন, সেতু, কালভার্ট নির্মাণ ও পুনর্র্নিমাণ, দারিদ্র্য বিমোচন, তথ্য প্রযুক্তি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খেলাধুলার, যানজট নিরসন, জলাবদ্ধতা দূরীকরণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সংস্কার, খেলাধুলার মানোন্নয়ন ও রাস্তার বাতি স্থাপনে বিশেষ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এ ছাড়া এডিবি, সিজিপি, এমজিএসপি, এডিপি প্রকল্প সহায়তার মাধ্যমে অবকাঠামো নির্মাণ ও পুনর্র্নিমাণ, পরিবেশ সংরক্ষণ এবং সিটি করপোরেশনের আওতাধীন খালগুলো খননের মাধ্যমে জলাশয় সংরক্ষণে বরাদ্দ রাখা হয়েছে।


২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্প (এডিপি) সহায়তার মাধ্যমে ১৩৬ কোটি ৭১ লাখ ৭১ হাজার ৮২৪ টাকা, মিউনিসিপ্যাল গভার্নেন্স সার্ভিসেস প্রজেক্টে (এমজিএসপি) ২০৫ কোটি ১৭ লাখ টাকা, সিটি গভার্নেন্স প্রজেক্টে (সিজিপি) ১৪৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা সহায়তার মাধ্যমে অবকাঠামো নির্মাণ ও পুনর্র্নিমাণ, পরিবেশ সংরক্ষণ এবং সিটি করপোরেশনের আওতাধীন খালগুলো খননের মাধ্যমে জলাশয় এবং কঠিন বর্জ্য সংগ্রহ ও অপসারন ব্যবস্থাপনায় বরাদ্দ রাখা হয়েছে।


এদিকে ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের বাজেটে অবকাঠামো নির্মাণ ও উন্নয়ন খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১২০ কোটি ৭২ লাখ ৭২ হাজার ৮১০ টাকা।  রাস্তা নির্মাণে ৪ কোটি, ব্রীজ/ কালভার্ট ২ কোটি, ড্রেন নির্মাণে ৫ কোটি, হাট-বাজার উন্নয়নে ১ কোটি টাকা, যাত্রী ছাউনী এবং খেলার মাঠ নির্মাণে ৫০ লাখ টাকা, রাস্তার নামফলক ও দিকনির্দেশা বাবদ ২০ লাখ টাকা, ট্রাক টার্মিনালের ভূমি উন্নয়ন বাবদ ১ কোটি টাকা, কর্মকর্তা ও কর্মচারী বাসস্থান নির্মাণ বাবদ ৫০ লাখ টাকা, কবরস্থান ও শ্মশানঘাট উন্নয়ন বাবদ ৩ কোটি টাকা, গণশৌচাগার ও জবাইখানা নির্মাণ বাবদ ১ কোটি টাকা, আইল্যান্ড ও ঘাটলা নির্মাণ ১ কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্দ ধরা হয়েছে।


এছাড়া ৫ নং ওয়ার্ডে সিদ্ধিরগঞ্জ অঞ্চলে কমিউনিটি সেন্টার কাম এপার্টমেন্ট নির্মাণ বাবদ ব্যয় ৪ কোটি ২৫ লাখ ৭৮ হাজার টাকা. ১৭ নং ওয়ার্ডে পাইকপাড়ায় শিমূল সিটি প্লাজা মার্কেট কাম এপার্টমেন্ট নির্মাণ বাবদ ২ কোটি ৭৬ লাখ ৪৮ হাজার টাকা, পদ্ম সিটি প্লাজা-১ মার্কেট কাম এপার্টমেন্ট নির্মাণ (ব্লক-এ) বাবদ ১০ কোটি ১৭ লাখ ৩৩ হাজার টাকা, পদ্ম সিটি প্লাজা-৩ মার্কেট কাম এপার্টমেন্ট নির্মাণ বাবদ ২৭ লাখ ৪১ হাজার টাকা, ১৩ নং ওয়ার্ডে কালিরবাজার ৬তলা বিশিষ্ট মার্কেট কাম আবাসিক ভবন নির্মাণ বাবদ ১ কোটি ১৭ লাখ ৩৩ হাজার টাকা, ১৩ নং ওয়ার্ডে মাসদাইর এলাকায় মাধবীলতা-২ মার্কেট কাম আবাসিক ভবন নির্মাণ বাবদ ৩ কোটি ১২ লাখ ৫৭ হাজার ৬৩০ টাকা, ১৬ নং ওয়ার্ডে ৬ তলা বিশিষ্ট বাণিজ্যিক কাম আবাসিক সিটি দোয়েল প্লাজা-১ (আলী আহাম্মদ চুনকা সড়ক) নির্মাণ বাবদ ৫ কোটি ৯৬ লাখ ৬০০ হাজার টাকা, একই ওয়ার্ডে ৯ তলা বিশিষ্ট বাণিজ্যিক কাম আবাসিক সিটি দোয়েল প্লাজা-২ (বঙ্গবন্ধু সড়ক) নির্মাণ বাবদ ১৪ কোটি ৫৬ লাখ ২২ হাজার ১৮০ টাকা এবং এই ওয়ার্ডে জিমখানা লেক উন্নয়ন সৌন্দর্য্য বর্ধন ও ওয়াকওয়ে নির্মাণ বাবদ ২২ কোটি ৭২ লাখ ৮০ হাজার টাকা ব্যয় বরাদ্দ ধরা হয়েছে।


তাছাড়া ৮ নং ওয়ার্ডে দোলনচাপা সিটি প্লাজা-১ বানিজ্যিক কাম আবাসিক ভবন নির্মাণ বাবদ ব্যয় ১৫ কোটি টাকা, নগর ভবন নির্মাণ বাবদ ১৬ কোটি টাকা, আঞ্চলিক অফিস ভবন নির্মাণ বাবদ ৩ কোটি টাকা, শহর সৌন্দর্য বৃদ্ধিকরণ, ফুটপাত নির্মাণ বাবদ ৫০ লাখ টাকা এবং ডাম্পিং সেন্টার, ভূমি উন্নয়ন ও বাউন্ডারী ওয়াল নির্মাণ বাবদ ২ কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্দ ধরা হয়েছে।   এ খাতে গত অর্থবছরের সংশোধিত অর্থের ব্যয়ের পরিমাণ হয়েছিলো ৩১ কোটি  ৩৮ লাখ ৪৭ হাজার ৫৬১ টাকা।


২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের বাজেটে অবকাঠামো মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৯ কোটি ১৮ লাখ টাকা।  এর মধ্যে রাস্তা মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ ৩ কোটি টাকা, ব্রীজ ও কালভার্ট মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ ২০ লাখ টাকা, ড্রেন মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ ২ কোটি টাকা, বাস টার্মিনাল ও সংযোগ সড়ক মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ ৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকা, মার্কেট মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ ১০ লাখ টাকা, কর্মকর্তা-কর্মচারী বাসস্থান মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ ২ লাখ টাকা, অফিস ভবন মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ ২০ লাখ টাকা, সেবক কলোনী মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ ২ কোটি টাকা, আইল্যান্ড ও ঘাটলা মেরামত বাবদ ২০ লাখ টাকা, সড়ক বাতি স্থাপন বাবদ ২ কোটি টাকা, বিভিন্ন মার্কেট ও ভবন নির্মাণের পরামর্শক ফি বাবদ ২ কোটি টাকা, শহীদ মিনার রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ ৫ লাখ টাকা, গণশৌচাগার ও জবাইখানা মেরামত বাবদ ৫ লাখ টাকা, কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ বাবদ ২ কোটি টাকা এবং শতভাগ স্যানিটেশন কর্মসূচী বাস্তবায়ন বাবদ ৫০ লাখ টাকা ব্যয় বরাদ্দ ধরা হয়েছে। এ খাতে গত অর্থবছরের সংশোধিত অর্থের ব্যয়ের পরিমাণ হয়েছিলো ১১ কোটি  ৪২ লাখ ২৯ হাজার ৫৭৯ টাকা।


২০১১ সালের ৩০ অক্টোবর সিটি করপোরেশন নির্বাচন হওয়ার পর ২০১২ সালে প্রথমবারের মতো বাজেট ঘোষণা করেছিলেন মেয়র আইভী। ওই বছরের ২৫ জুন প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাজেট ঘোষণা করেন তিনি। ওই বাজেট ছিল ৩০৭ কোটি টাকার। এরপর ২০১৩-২০১৪ অর্থ বছরে নাসিকের বাজেট ছিল ৪শ’ ৩ কোটি ৯২ লাখ ৮৬ হাজার ৩৭৬ টাকা। ২০১৪-২০১৫ অর্থ বছরে বাজেটের পরিমাণ ছিল ৪শ’ ২৪ কোটি ৪ লাখ ৬৯ হাজার ৫১২ টাকা। ২০১৫-২০১৬ অর্থ বছরে বাজেট ছিল ৪শ’ ৮৮  কোটি ৯০ লাখ ৮৪ হাজার ৬১৭ টাকার। ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে বাজেটের পরিমাণ ছিল ৬শ’ ১  কোটি ২০ লাখ ২৯ হাজার ৭৯১ টাকার। ২০১৬ সালের ২২ ডিসেম্বর  সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দ্বিতীয় মেয়াদে বিজয়ী হওয়ার পর নাসিকের ৬ষ্ঠ বাজেট ঘোষণা করেন মেয়র আইভী। ২০১৭ সালের ২৩ জুলাই ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে ৬৬৩ কোটি ৬৭ লাখ ৪৩ হাজার ৬২৫ টাকা ঘোষণা করেন তিনি।

এই বিভাগের আরো খবর